ব্লগিং অনেক কারণে হতে পারে, হতে পারে আপনার নেশা, হতে পারে আপনার ভালো মানের একটি পেশা। আপনি যখন নিজের কোন ওয়েবসাইট তৈরির কথা ভাবেন বিশেষ করে ব্লগ ; তখন আপনার মনে একটি জিজ্ঞাসা নিশ্চয়ই আসে যে , ব্লগার দিয়ে বানাব? নাকি ওয়ার্ডপ্রেস দিয়ে?
গুগল ব্লগার হচ্ছে গুগলের অধিনে একটি ফ্রি ব্লগিং টুল, যেটার ব্যবহার সম্পূর্ণই ফ্রি। আবার অপরদিকে বেশিরভাগ প্রফেশনাল ব্লগাররা আপনাকে ওয়ার্ডপ্রেস ইউজ করতে রেকোমেন্ড করবে। ওয়ার্ডপ্রেস ও কিন্তু দুই প্রকারের, একটা ফ্রি এবং আরেকটা সেলফ হোস্টেড! কি সব কিছু আরো বেশি করে গুলিয়ে যাচ্ছে তো? টেনশন নেওয়ার দরকার নেই, চলুন সহজেই বুঝানোর চেষ্টা করা যাক…
গুগল ব্লগার
ব্লগার গুগল এর একটি ফ্রি ব্লগিং প্ল্যাটফর্ম । তবে সর্বপ্রথম পায়রা ল্যাব ১৯৯৯ সালে এটি তৈরি করে এবং প্রথমদিকে এর নাম ছিল ব্লগস্পট। এই ব্লগস্পট ছিল ইন্টারনেট এর প্রথমদিককার একটি ফ্রি ব্লগ পোস্টিং প্ল্যাটফর্ম। ২০০৩ সালে গুগল এর ভবিষ্যৎ চাহিদার কথা চিন্তা করে পায়রা ল্যাব এর থেকে এটি কিনে নেয়। অতঃপর ২০০৬ সালে ব্লগস্পটকে গুগল তাদের নিজস্ব সার্ভার এর আওতায় নিয়ে আসে এবং একে একটি কোন সাবস্ক্রিবশন চার্জ ছাড়া ফ্রি ব্লগিং প্ল্যাটফর্মে পরিণত করে। গুগল পরবর্তীতে এর নাম ‘ব্লগস্পট’ থেকে ‘ব্লগার’ করে।
যদি কথা বলি ফ্রি অপশন নিয়ে সেক্ষেত্রে ফ্রি গুগল ব্লগার সর্বদা বেস্ট একটি অপশন হিসেবে প্রমাণিত হতে পারে। গুগল ব্লগার একটি গুগলের ফ্রি ব্লগ পাবলিশিং টুল। অনেক নতুন ব্লগার এবং আমার নিজেরও শুরুর দিকটা গুগলের ব্লগারের হাত ধরেই শুরু হয়েছিলো।
ব্লগারে ব্লগ সেট করা পানির মতো সহজ। অবশ্যই আপনার গুগল আইডি দিয়েই ব্লগার অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে পারবেন। আপনাকে ব্লগের নাম সেট করতে হবে, একটি সাব-ডোমেইন পছন্দ করতে হবে, একটি ট্যামপ্লেট চয়েজ করলেই ব্যাস ব্লগ তৈরি হয়ে যাবে। একটি ব্লগার অ্যাকাউন্ট থেকে আপনি অনেক গুলো ব্লগ তৈরি করতে পারবেন। এভাবে আপনি একটি ব্লগ থেকে আরেকটি ব্লগকে আলাদা করতে পারবেন।
ব্লগার আপনাকে একটি সাব-ডোমেইন প্রদান করবে, যেমন; ExelNode.Blogspot.com — তবে আপনি চাইলে কিছু টাকা খরচ করে নিজের একটি টপ লেভেল ডোমেইন কিনে আপনার আগের ব্লগার সাইটের সাথে লিংক করে দিতে পারেন। এতে আপনার সাইটের ইম্প্রেশন ভালো দেখাবে, সাথে আপনার ব্লগ রিডারের কাছে ব্লগ নামটি মনে রাখতে সুবিধা হবে। আর অপরদিকে আপনাকে ওয়েব হোস্টিং নিয়ে কোন বাড়তি চিন্তা করতে হচ্ছে না, আপনার ব্লগ জনপ্রিয়তা লাভ করলেও ডাউন থাকার কোন ভয় থাকে না ব্লগারে।
ওয়ার্ডপ্রেস
ওয়ার্ডপ্রেস হল একটি ফ্রি পিএইচপি এবং মাইএসকিউএল ভিত্তিক ওপেন সোর্স ওয়েব কনটেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম। মূলত ব্লগ ওয়েবসাইট তৈরির জন্য ২০০৩ সালের ২৭ মে প্রতিষ্ঠাতা ম্যাট মুলেনওয়েগ এই বিশেষ কনটেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ‘ওয়ার্ডপ্রেস’ কে রিলিজ করেন। যেখানে গুগল ব্লগার গুগলএর সার্ভারেই হোস্টেড ; সেখানে ওয়ার্ডপ্রেস কে WordPress.org থেকে ডাউনলোড করে নিজস্ব ওয়েব হোস্টিং বা ওয়েব সার্ভারে ইন্সটল করতে হয়। ওয়ার্ডপ্রেসকে বর্তমানে পৃথিবীর সেরা ওয়েব কনটেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।
WordPress.Com Vs. WordPress.Org
অনেকে WordPress.com এবং WordPress.org কে একই মনে করেন। তবে এই দুটি একই কোম্পানির হলেও, সার্ভিস একই নয়। WordPress.org কে বলা হয় আসল ওয়ার্ডপ্রেস! এখানে অফিসিয়াল সাইট থেকে ওয়ার্ডপ্রেসটিকে ডাউনলোড করে সেলফ হোস্টেড সার্ভারে, নিজস্ব ডোমেইন সহ সেটাপ করতে হয়।
ওয়ার্ডপ্রেস এর যতরকম সুবিধা তা এতে ব্যবহার করা যায়, ওয়ার্ডপ্রেসকে এক্সট্রা কোনো টাকা না দিয়েই (তবে হোস্টিং বিল প্রদান করতে হবে)। মেম্বারশীপ সাইট থেকে শুরু করে, ই কমার্স সাইট এতে তৈরি করা যায়।
অন্যদিকে, WordPress.com ওয়ার্ডপ্রেসের পুরোপুরি একটি পেইড প্রোগ্রাম। প্রথমে অনেকে এতেই ঢুকে পড়েন এবং wordpress.com সাব ডোমেইন দিয়ে ফ্রী সাইট খুলে বসেন। তবে এতে আসল ওয়ার্ডপ্রেসের সব সুবিধা পেতে মাসে ২০০০ টাকার মতো খরচ করতে হবে। যেটাকে বলা হয় ওয়ার্ডপ্রেসের বিজনেস সার্ভিস। আনলিমিটেড টাইম ডোমেইন ও সার্ভার সব ওয়ার্ডপ্রেস থেকেই দেয়া হবে, সাথে সাথে সবসময় পাওয়া যাবে ওয়ার্ডপ্রেসের সাপোর্ট টিমের ২৪ ঘন্টার সাপোর্ট। তবে বড় বড় নিউজ মিডিয়া যেমনঃ টাইমস ও কোম্পানি ব্যাতিত কেউ তেমন এটি ব্যবহার করে না। পার্সোনাল ব্লগারদের ক্ষেত্রে এটা একদম বাজে, কেননা টাকা আয় করতে পারবেন, অর্থাৎ বিজ্ঞাপন সেবাগুলো ব্যবহার করতে পারবেন না। wordpress.com এর একটি ফ্রী সেবাও রয়েছে তবে তা একই কাজের না।
বেস্ট ম্যানেজড ওয়ার্ডপ্রেস হোস্টিং খুঁজছেন? এক্সেলনোড (ExelNode) প্রিমিয়াম ম্যানেজড ওয়ার্ডপ্রেস হোস্টিং ট্রায় করে দেখুন!
তো এবার চলে যাওয়া যাক আজকের আর্টিকেলের মূল বিষয়ে, আপনার জন্য ব্লগার বেস্ট নাকি হেলফ হোস্টেড ওয়ার্ডপ্রেস? এই আর্টিকেলে ফ্রি wordpress.com নিয়ে আলোচনা করবো না! — কে বেস্ট, এই উত্তর এক ঝটকায় দেওয়া সম্ভব নয়, এতে নানান ব্যাপার গুলো মাথায় রাখতে হবে! তো চলুন, আলোচনা শুরু করা যাক…
আপনার ওয়েবসাইট এর খরচ
আপনি যখন দুটির ভেতর যেকোনো একটিকে আপনার ব্লগিং প্ল্যাটফর্ম হিসেবে বেছে নিচ্ছেন তখন এখানে আপনার ওয়েবসাইট এর লাইফটাইম কত হবে সে নিয়ে একটি প্রশ্ন থাকে। আরও সহজ ভাবে বলতে গেলে আপনার ওয়েবসাইট ইন্টারনেটে কতদিন লাইভ থাকবে।
ব্লগার
ব্লগার এর ক্ষেত্রে এই ব্যাপারটি অনেক সহজ । কেননা ব্লগারে আপনার ওয়েবসাইটের হোস্টিং এর বাপারে কোন চিন্তা করতে হবে না ; কারন গুগল এখানে সয়ং আপনার ওয়েবসাইট এর হোস্টিং এর দায়িত্ব নিয়েছে। তাই আপনি যদি ব্লগার এর ডিফল্ট ডোমেইন দিয়ে কোন ওয়েবসাইট তৈরি করে রাখেন ; তবে যতদিন গুগল আছে, যতদিন ব্লগার আছে আপনার ওয়েবসাইট তথা ব্লগ একইরকম অক্ষত থাকবে।
কিন্তু এখানেও একটু কিন্তু রয়েছে! গুগল কিন্তু হঠাৎ করেই তাদের যেকোনো সার্ভিস বন্ধ করে দেওয়ায় অনেকটা পটু! গুগলে অসংখ্য সার্ভিস কিন্তু বর্তমানে ডেড! আর ব্লগারের উপরে গুগলে ফোকাস অনেক কমই দেখা যায়, তাই হঠাৎ করেই যে গুগল তাদের ব্লগারকে মৃত ঘোষণা করবে না, এর কোনই ভরসা নেই!
আপনি ব্লগারে কাস্টম ডোমেইনও ব্যাবহার করতে পারবেন সেহেতু আপনার সাইট চিরদিনই একটিভ থাকবে যদি আপনি আপনার ডোমেইনকেও নিয়মিত রিনিউ করতে পারেন। সুতরাং ব্লগার সাইট এর জন্য আপনার বছরে খরচ হবে কেবল ডোমেইন এর জন্য ৭০০-২০০০+ টাকা ; এখানে নির্ভর করে আপনি কোন কি ডোমেইন কিনছেন। ডট কম ডোমেইন এর জন্য আপনার খরচ হবে বছরে ৮০০-৯০০ টাকা। এখান থেকে আমাদের ডোমেইন প্রাইস চেক করতে পারে!
ওয়ার্ডপ্রেস
অন্যদিকে ওয়ার্ডপ্রেস এর ক্ষেত্রে ডোমেইন এর পাশাপাশি আপনার ওয়েব হোস্টিং প্ল্যানকেও নিয়মিত রিনিউ করতে হবে তথা আপডেটেড রাখতে হবে। আপনার ডোমেইন অ্যাড্রেস এবং হোস্টিং প্ল্যান এর যেকোনো একটি বন্ধ হয়ে গেলে ওয়েবসাইট পাঠকদের জন্য ওয়েবসাইট আর দৃশ্যমান হবেনা। অনেক সময় ওয়েবসাইট এর জন্য ডেডিকেটেড আইপি নেয়া থাকলে ডোমেইন চলে গেলেও আপনি হয়ত সাইট অ্যাক্সেস করতে পারবেন; তবে পাঠকদের কি হবে? সুতরাং ওয়ার্ডপ্রেস ওয়েবসাইট ততদিন অ্যাক্টিভ থাকবে যতদিন আপনি ওয়েবসাইট এর পেছনে অর্থ খরচ করছেন।
কিন্তু একটা জিনিষ তো মাথায় রাখতেই হবে, তাই না, আপনি যখন কোন সাইট প্রফেশনাল ভাবে তৈরি করার চিন্তা করছেন আর সেটা থেকে অর্থ উপার্জন করা নিয়ে ভাবছেন, তো আপনাকে তো অর্থ খরচ ও করতে হবে! সাধারণ ব্যাপার!
যদি ওয়ার্ডপ্রেস সাইটের খরচ নিয়ে কথা বলি তো শুরুতে সেটা একেবারেই নগণ্য! এক্সেলনোডের শেয়ারড হোস্টিং প্ল্যান কিনে আপনি অর্থ সুপার সেভিংস করতে পারবেন! আমাদের পার্সোনাল শেয়ারড হোস্টিং প্ল্যান যেকোনো নতুন ওয়েবসাইটের জন্যই আদর্শ, এতে বছরে কেবল ১ হাজার টাকার মতো খরচ পরবে আপনার! আরো বিস্তারিত রিভিউটি এখানে চেক করুন!
সাথে শুরুতে আপনার একটি প্রিমিয়াম ডোমেইন নেম লাগবে, এক্সেলনোডে সস্তা দামে বিভিন্য প্রিমিয়াম ডোমেইন কিনতে পারবেন। এখান থেকে আমাদের ডোমেইন প্রাইস চেক করতে পারে! যদি ডট কম ডোমেইনের কথাও বলি, সেক্ষেত্রে ৬০০-৭০০ টাকার মতো খরচ পরতে পারে বছরে। মানে ১৫০০-১৬০০ টাকা/বছর খরচ করার মাধ্যমে আপনি একটি প্রিমিয়াম ওয়ার্ডপ্রেস সাইটের মালিক হয়ে যেতে পারেন!
ওয়েবসাইট এর জন্য থিম
ব্লগার এর ক্ষেত্রে গুগল এর কতগুলো ডিফল্ট থিম রয়েছে তবে তা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আপনার ভালো নাও লাগতে পারে। তবে সমস্যা নেই আপনার জন্য রয়েছে অনেক থার্ড পার্টি থিম যেগুলোকে আপনি আপনার ব্লগার ওয়েবসাইটে ব্যাবহার করতে পারবেন; এখানে রয়েছে অনেক ফ্রি থিম আবার অনেক গুলো রয়েছে পেইড। সাধারনত ব্লগার থিমগুলোকে বলা হয় টেমপ্লেট। তবে ওয়ার্ডপ্রেস এর থিম এর তুলনায় এখানে ফিচার পাওয়া যাই অনেক কম।
ওয়ার্ডপ্রেস এর হিউজ ডেভেলপার বান্ধব পরিবেশ এবং এর ফাংশনালিটি ওয়ার্ডপ্রেস থিম ডেভেলপারদের অনেক বেশি ফিচার যুক্ত করে দেয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। আর টেকনিকাল দিক থেকেও ব্লগার থিমগুলো প্রধানত এইচটিএমএল,জাভাস্ক্রিপ্ট বেজড হয়ার কারনে ওয়ার্ডপ্রেস থিমগুলির থেকে এগুলোর লোডিং স্পিড অনেক সময় বেশি হয়। ব্যাপারটি আপনারা অনেক থিম রয়েছে যেগুলো ওয়ার্ডপ্রেস পাশাপাশি ব্লগার এর জন্যেও এভেইলেবল সেসব পরিক্ষা করে দেখতে পারবেন।
ফাংশনালিটি
ফাংশনালিটি এর দিক দিয়ে গুগল এর ব্লগার থেকে ওয়ার্ডপ্রেস অনেক এগিয়ে; যেখানে আপনি ওয়ার্ডপ্রেস এর জন্য ২০০০০ এর বেশি নানারকম প্লাগিন্স পাচ্ছেন; সেখানে ব্লগার এর লেআউট সেকশন থেকে পাওয়া উইজার্ড গুলো রয়েছে অনেক পিছিয়ে। ওয়ার্ডপ্রেস এর থিম কাস্টমাইজেশন ,নানা রকম ফিচার কন্ট্রোল এর জন্য রয়েছে অনেক প্লাগিনস । আর এসব নানা প্লাগিনস টুলস ব্যাবহার করে ওয়ার্ডপ্রেস এর ব্যাবহার এক্সপেরিয়েন্স অন্যরকম মাত্রায় নিয়ে যাওয়া যায়। ওয়ার্ডপ্রেসে ইউজার রেজিস্ট্রেশান সিস্টেম রয়েছে; গুগল ব্লগারে যা নেই; এখানে তা ম্যানুয়াল ভাবে অ্যাডমিনকেই করতে হয়।
এখন অনেক ব্লগার থিম এসেছে যেখানে দেখা যায় যে , ইকমার্স এর মত নানারকম ফিচার। তবে তা খুবই সীমিত; এখানে কেবল থিম এর ভেতর যে সব ফিচার রয়েছে কেবল সেসবই। অন্য দিকে ইকমার্স এর মত দারুন কিছু তৈরি করার জন্য ওয়ার্ডপ্রেসে রয়েছে উকমার্স এর মত অফিসিয়াল প্লাগিন। উকমার্স ওয়ার্ডপ্রেস এর ডেভেলপার কোম্পানি এর তৈরি অফিসিয়াল একটি প্লাগিন যেটি কিনা আপনার ওয়ার্ডপ্রেস সাইট কে পুরোপুরিভাবে ইকমার্স রেডি করে তোলে।
ফাংশনালিটি এর ক্ষেত্রে আরও কিছু যদি বলতেই হই তাহলে বলি, পিপসো নামে একটি নতুন প্লাগিন এসেছে যার মাধ্যমে ওয়ার্ডপ্রেস ব্যাবহার করে আপনি ফেসবুক এর মত একটি সম্পূর্ণ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তৈরি করতে পারবেন!
এক কথায়, একভাবে বলতে গেলে ওয়ার্ডপ্রেসের সাথে যা ইচ্ছা তেমন ওয়েবসাইট তৈরি করা সম্ভব, যেমন ভিজুয়াল বিল্ডার ইউজার করে আপনার সাইটের পেজ গুলোকে রিয়াল টাইম ডিজাইন ও এডিট করতে পারবেন! তো এদিক থেকে ব্লগার আর ওয়ার্ডপ্রেসের মধ্যে আকাশ পাতালের পার্থক্য!
ব্লগিং এর ক্ষেত্রে কোনটি ভালো?
এখন কথা হচ্ছে এমন, কেবল ব্লগিং বা লেখালেখি করবেন কোনটি ভালো? তবে সেক্ষেত্রে দুটিই ভালো ভালো। বরং যারা কেবল নিজের লেখাকে অন্যদের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য একটি মাধ্যম খুঁজছেন; তাদের জন্য আমি বলব ব্লগার ভালো। কেননা এখানে আপনার জন্য তেমন কোন খরচ হবে না; যদি কেবল ডোমেইন নেন সেক্ষেত্রে কেবল ডোমেইন এর খরচ হবে। ব্লগিং এর জন্য অনেক সিম্পলে ডিজাইন এর ওয়েবসাইট হলে ভালো হয়; আর সে জন্য আমি বলব ব্লগারেই আপনি অনেক সিম্পল এবং পুরোপুরি ফ্রি ব্লগার টেমপ্লেট পাবেন, যা ব্যাবহার করে আপনি অনেক সুন্দর একটি ওয়েবসাইট প্রস্তুত করে তুলতে পারবেন।
অন্যদিকে কেবল এই জন্য ওয়ার্ডপ্রেস আপনার কাছে অনেক সময় বেশি খরচও মনে হতে পারে । তবে আপনি ব্লগিং এর পাশাপাশি আরও অ্যাডিশনাল ফাংশনালিটি পেতে চাইলে আপনার জন্য ওয়ার্ডপ্রেস ভালো। ব্লগিং অর্থাৎ লেখালেখি এর চাইতে বেশি চাহিদা হলে ব্লগার আপনার জন্য নয়; আপনার জন্য তখন ওয়ার্ডপ্রেস।
আয়
তবে আয়ের চিন্তা মাথায় থাকলে আপনার জন্য ওয়ার্ডপ্রেস সবচেয়ে ভালো । ব্লগার ব্লগেও আপনি গুঅগ্লে অ্যাডসেন্স পাবেন তবে সেক্ষেত্রে আপনি আপনার ওয়েবসাইট গুগল দ্বারা রিভিউ করে যে অ্যাডসেন্স টি পাবেন তা হল ‘হোস্টেড’ অ্যাডসেন্স ; যার মানে হল গুগল এর নিজস্ব প্ল্যাটফর্মে হোস্ট করা সাইট এর জন্য যে অ্যাডসেন্স দেয়া হয় আরকি।
আর মূলত গুগল এখানেই আপনার থেকে অ্যায় করে নেবে; কেননা এখানে আপনার ব্লগার সাইট অ্যাডসেন্স থেকে যত আয় করবে তার থেকে ৪০% এর মত অর্থ নিজেরা নিয়ে নেবে; এবং বাকি টাকা আপনাকে দেবে । তবে অন্যদিকে নিজস্ব হোস্টেড ওয়ার্ডপ্রেস সাইট এর ক্ষেত্রে আপনি যে অ্যাডসেন্স পাবেন তা হল ‘নন-হোস্টেড’ অ্যাডসেন্স। আর এখানে আপনি আপনার আয়ের ৬৮% পাবেন। সুতরাং আয় এর কথা মাথায় থাকলে ওয়ার্ডপ্রেস বেস্ট।
এখানে আরেকটি পয়েন্ট রয়েছে, সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন বা শর্ট ফর্মে এসইও, যেটা প্রত্যেকটি ওয়েবসাইটে সার্চ ইঞ্জিন থেকে ভিজিটর নিয়ে আনার কিছু কৌশল। ব্লগার সাইট সার্চ ইঞ্জিন বন্ধুত্বপূর্ণ হিসেবে তৈরি করা একটু মুশকিল, এতে ম্যানুয়াল সাইট এডিট করার প্রয়োজন পড়তে পারে, কিন্তু ওয়ার্ডপ্রেসে প্রত্যেকটি কাজের জন্য আলাদা আলাদা প্লাগিন রয়েছে, তাই জাস্ট সেগুলোকে ইন্সটল করার মাধ্যমেই সহজেই এসইও ঠিক করে নিতে পারবেন।
সিকিউরিটি
গুগল এর ব্লগার নিরাপত্তার দিক দিয়ে অনেক এগিয়ে। গুগল এর নিজস্ব ক্লাউড সার্ভারে হোস্টেড হওয়ার কারনে নিরাপত্তার ব্যাপারটা আপনি গুগল এর হাতেই ছেড়ে দিন। সুতরাং গুগল ব্লগার তখনই হ্যাক হওয়া সম্ভব কেবল যদি আপনার জি-মেইল অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়!
যদিও ওয়ার্ডপ্রেস প্ল্যাটফর্মটি যথেষ্ট সিকিউর তবুও সেলফ হোস্টেড হওয়ার কারনে এখানে নিরাপত্তার জন্য ৩য় পক্ষ নানা প্লাগিনস ব্যাবহার করে ওয়েবসাইট নিরাপদ করা যায়।
আর নিরাপত্তা নিয়ে যদি আপনি সুপার সচেতন হয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে আমাদের সম্পূর্ণ ম্যানেজড ওয়ার্ডপ্রেস হোস্টিং ট্রায় করতে বলবো, আমরা বলবো না, আমরা প্রত্যেকটি ডিডস অ্যাটাক ও আলাদা অ্যাটাক থেকে আপনাকে বাঁচাতে পারবো, কিন্তু বেশিরভাগ অ্যাটাক থেকেই আপনার সাইটকে রক্ষা করার জন্য আমাদের টিম সর্বদা কাজ করছে!
ব্লগার এবং ওয়ার্ডপ্রেস দুটিই নিজ নিজ দিক থেকে খুবই ভালো প্ল্যাটফর্ম । দুটি প্ল্যাটফর্ম এর ভেতর ফিচার নিয়ে যেমন রয়েছে রাত দিন তফাৎ ; তেমনি ভাবে এদের সুবিধা নিয়েও তফাৎ রয়েছে। একটি ব্যাবহার করতে ব্যাবহারকারির তেমন টাকা খরচ করতে হবে না( ডোমেইন ব্যাবহার না করলে টাকা খরচ হবেই না ); আবার আরেকটি ব্যাবহার করতে একটু বেশি অর্থ খরচ করতে হবে। তবে যদি নিয়মিত মান সম্মত কনটেন্ট দেয়ার ফলে ভবিষ্যতে আপনি অনেক বেশি সংখ্যক পাঠক পান; তবে সেক্ষেত্রে ওয়ার্ডপ্রেস ব্যাবহার করেই আপনি বেশি সফল হবেন। আর ব্লগিংকে খুবই সিরিয়াসলি নিলেও আপনার জন্য ওয়ার্ডপ্রেস হবে সেরা।
সাইট ডাউন আর ওয়ার্ডপ্রেস সমস্যায় ভুগছেন? এক্সেলনোড ম্যানেজড ওয়ার্ডপ্রেস হোস্টিং ট্রায় করে দেখুন!
Images: ExelNode